বিদেশে উচ্চশিক্ষাঃ স্পট ভর্তির সত্যতা যাচাই
জার্মানিতে (এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে) স্পট এডমিশন টাইপ বিজ্ঞাপন প্রায়ই আমাদের দেশের পত্র পত্রিকায় দেখা যায়। সেখানে আবার সাদা চামড়ার কারো কারো ছবি পর্যন্ত থাকে। এইসব লোভনীয় বিজ্ঞাপনের সত্যতা কতটুকু – আসুন যাচাই করে দেখি।
পাঠক, বুয়েটে ভর্তি হওয়া আর বুয়েটে ভর্তির জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া কি আসলে এক জিনিস? বুয়েটে ভর্তির জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়, কিন্তু কোচিং সেন্টারে ভর্তির জন্য কি কোন শর্ত দরকার আছে? স্পট ভর্তি বলতে আসলে শুধুমাত্র কোচিং করার জন্য ভর্তি বোঝানো হচ্ছে, সরাসরি জার্মানির কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নয়।
জার্মানিতে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য একটি জার্মান ভাষার পরীক্ষা পাস করা আবশ্যক, এটাকে টোফেল (TOEFL or IELTS) বা আইএলটিএস এর সাথে তুলনা করা যায়। এই পরীক্ষার প্রস্তুতি যেসব কোচিং সেন্টারে করানো হয়, তাদেরকে বলে ভাষা শিক্ষাকেন্দ্র বা ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার। বিজ্ঞাপনের লেখা স্পট ভর্তি আসলে এইসব কোচিং সেন্টারে ভর্তির গ্যারান্টি, আসল পরীক্ষা পাস না হলে কখনই মূল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে না।
জার্মানিতে অসংখ্য এই জাতীয় ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠান আছে, এদের মধ্যে যেগুলো ভাল মানের, তাদের জন্য ছাত্র যোগাড় করা কোন সমস্যা নয়। যাদের মানগত অবস্থান ভাল নয়, ছাত্র ছাত্রী ধরার জন্য এইসব প্রতিষ্ঠান ভাড়া করা সাদা চামড়ার জার্মানদের (এদের অনেকেরই চাকুরী নেই!) বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। সাদা বাংলায় এদের কাজকে বলে “মুরগি ধরা”।
অবশ্য এটা বহু কোটি টাকার ব্যবসা, সুতরাং এখানে এরা আরও কিছু চাল চালে। যেমন, এরা জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “কন্ডিশনাল” ভর্তির কাগজ ইস্যু করে। এইসব কাগজ লিগ্যাল, এখানে বলা থাকে যে, অমুক ছাত্র যদি ভাষার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে, তাহলে তাকে অমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে নেয়া হবে। মজার কথা হচ্ছে, এই “কন্ডিশনাল বা শর্তসাপেক্ষ” ভর্তির কাগজ আসলে নিজে সরাসরি যেকোনো ইউনিভার্সিটিতে মেইল করলেই পাওয়া যায়। এর জন্য লক্ষ টাকা দিয়ে এজেন্সির ধার ধারার কোন দরকার নেই। তারচেয়েও বড় কথা হল, ভাষার পরীক্ষা পাস না করতে পারলে এমনিতেও আসল ভর্তি হচ্ছে না কিছুতেই।
পাঠক, একটু খেয়াল করুন। জার্মানিতে এইসব শর্তসাপেক্ষ ভর্তির কাগজ নিয়ে এসে এখানে কাজের অনুমতি থাকে না। দ্বিতীয়ত, জার্মানিতে বসে ভাষা শেখা অত্যন্ত বায় বহুল একটি কাজ। এই কোচিং সেন্টার গুলো আপনার কয়েক বংশের সব টাকা চুষে আপনাকে ছিবড়ে ফেলে রেখে যাবে। এবং যখন আপনি ভাষা শিখতে ব্যর্থ হবেন, তখন দেখবেন জার্মানি থেকে আপনাকে বের করে দেয়া হচ্ছে। আমাদের জানা মতে, জার্মানিতে ভাষা শিখতে আসা ছেলেদের মধ্যে ১ শতাংশও ভাষার পরীক্ষায় পাস করতে পারে নাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তো অনেক দূরের কথা।
আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ, নিজের হাতে নিজের পায়ে কুড়াল মারা বন্ধ করুন। এজেন্সির ফাঁদে পা দিবেন না। আমাদের এখানে এজেন্সির যত লোভনীয় অফার প্রকাশ করুন, আমরা বুঝিয়ে দেব আসলে সেই অফারের পেছনে কি ফাঁদ লুকিয়ে আছে।
আদনান সাদেক, ২০১৪
Adnan Sadeque
http://bsaagweb.de/germany-diary-adnan-sadeque
লেখক পরিচয়ঃ
http://bsaagweb.de/adnan-sadeque
Latest posts by Adnan Sadeque (see all)
- জার্মানির ডায়েরিঃ২৪ “ফিহা এবং কিছু সমীকরণ” - November 30, 2018
- জার্মানির পথেঃ১৬ জার্মানিতে মাইগ্রেশন, আসছে চমকপ্রদ নতুন আইন, ২০১৮ - November 21, 2018
- জার্মানিঃ “Das Beste, oder nichts” - January 23, 2018
There is One Comment.
Pingback: বিসাগ ওয়েব সাইটের জনপ্রিয় আর্টিকেল (আপডেটঃ ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪) | বিসাগ (www.BSAAGweb.de)