মার্চ ১৭, ২০১৩।

সারা জীবনের জন্য ব্যান হয়েছে এই গ্রীক জাতীয় দলের খেলোয়াড়
মাত্র ২০ বছর বয়েসী গ্রিক তারকা স্ট্রাইকার গিওর্গাস কাটিদিস লোকাল লিগের খেলায় গোল করে তার উদযাপন করতে গিয়ে নাৎসি সময়ের মতন হিটলারি নড করলেন ডান হাত উঁচু করে। আর যায় কোথায়, তাকে ব্যান করা হল জাতীয় দল থেকে বাকি জীবনের জন্য (বলা বাহুল্য গ্রিকের একটি ন্যাশনালিস্ট পার্টিকে দেখা গেছে নিও নাৎসিকে সমর্থন দিয়ে র্যালি করতে)। নাৎসিদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে সমস্ত বিশ্বেই হিটলার ও তার আদর্শকে সমর্থনের দায়ে শাস্তি পেয়েছে এমন অনেকেই।
খোদ জার্মানিতে হিটলারকে এখন কেমন চোখে দেখা হয়? কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়।
ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বার্লিন।
বার্লিনে জার্মান পার্লামেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দিয়েছিল এক কানাডিয়ান টুরিস্ট। মজা করতে গিয়ে তার গার্ল ফ্রেন্ডের কথা মত হেইল হিটলার বলে সে হাত উঁচু করে পরের ছবির পোজ দিল। ছবি তোলা শেষ হতে যা বাকি, পাঁচ মিনিট পর কানাডিয়ান ভদ্রলোক তার গার্ল ফ্রেন্ডসহ পুলিশ হেফাজতে হাতকড়া পরে গরাদে হাজির। অনেক বলে কয়ে তবে তারা ছাড়া পেলেন পাঁচ ঘণ্টা পর, তবে মোটা অঙ্কের ফাইন দিয়ে এবং ক্যামেরার মেমোরি কার্ড বাজেয়াপ্ত হবার পর।
জুলাই, ২০০৮। কোলোন এয়ারপোর্ট।
এয়ারপোর্টে নেমে গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক তর্কে জড়িয়ে পড়লেন জার্মান ক্যাশিয়ারের সাথে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে, ব্রিটিশ ভদ্রলোক রেগে গিয়ে ক্যাশিয়ারকে রাগানোর জন্য হাইল হিটলার বলে গালি দিলেন। ক্যাশিয়ার জার্মানের লাল মুখ প্রায় আগুন লাল। সে ফোন তুলে নিয়ে হুমকি দিল, ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে তোমাকে পুলিশ ধরতে আসছে, পারলে পালাও। ব্রিটিশ ভদ্রলোক হাত নামালেন না। ৮৪ সেকেন্ডের মাথায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করল।
খুব সাম্প্রতিক একটা ঘটনা।

ভেস্টফালেন স্টেডিয়াম
১লা নভেম্বর, ২০১৩।
ডর্টমুন্ডের বিখ্যাত ভেস্টফালন স্টেডিয়ামে খেলছিল বোরশিয়া ডর্টমুন্ড ও স্টুটগার্ট। বোরশিয়ার একচেটিয়া আক্রমণে ৪-১ এ পিছিয়ে পড়ল স্টুটগার্ট দল। এমন সময় স্টেডিয়ামে এক ডর্টমুন্ডের সমর্থক পিলারের উপর উঠে হিটলারের সাইন দেখাল। খেলায় ডর্টমুন্ড জিতল ৬-১ গোলে, ইতিহাসে স্টুটগার্টের বিপক্ষে বিশালতম বিজয়। তবে এই ঐতিহাসিক বিজয়কে ছাপিয়ে সেই ফ্যান হয়ে উঠল আলোচনার মধ্য বিন্দু। গত সপ্তাহে অবশেষে ডর্টমুন্ড ক্লাবের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হল, সেই সমর্থক আগামী ২০১৭ পর্যন্ত শুধু ভেস্টফালন স্টেডিয়াম নয়, বরং জার্মানির সকল স্টেডিয়াম থেকে তাকে নিষিদ্ধ করার। আপাতত এই নাৎসি সমর্থককে সামনের চার বছর প্রিয় দলের খেলা টিভিতেই দেখতে হবে।
এই ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পরের খেলায় “নাৎসিরা থাকুক বাইরে” – এই প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্টেডিয়ামে হাজির হল হাজার হাজার ডর্টমুন্ড সমর্থক।
জার্মানির স্কুলে সব ছাত্রছাত্রীদের অবশ্য পাঠ্য নাৎসি ইতিহাস। সেখানে তুলে ধরা হয়, কেন হিটলার ও তার ফ্যাসিবাদ মানব সভ্যতার জন্য অভিশাপ নিয়ে এসেছিল। কেন নাৎসি বাহিনীর আদর্শ মানবতা বিরোধী ছিল, কেন সব জার্মান নাগরিককে সচেতন হতে হবে, যেন এমন ঘটনার আর কখনই পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের অনেক ছেলে পেলের মধ্যে হিটলারের জনপ্রিয়তা দেখা যায়। বাংলাদেশে স্বাধীনতার অনেক বছর পরেও এখনও যুদ্ধপরাধীদের বিচার কার্যকর হয় নি, বরং এদেরকে বাঁচাতে ব্যস্ত অনেক মানুষ। বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের এবং তাদের আদর্শকে বর্জন করা হয়েছে। এবং এতে সবার আগে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে নিজ দেশের জনগণকে। আমাদের ও সময় এসেছে সেই পথে অগ্রসর হবার।
যুদ্ধের অনেক বছর পর সারা পৃথিবী খুঁজে খুঁজে নাৎসি বাহিনীর সর্দারদের সাজা দেয়া হয়েছে এই জার্মানির মাটিতেই। অনেককে তুলে আনা হয়েছিল কবর খুঁড়ে। জার্মানিকে যতই হিটলারের দেশ বলে অনেকেই এখনো চিহ্নিত করুক না কেন, হিটলার ও তার আদর্শ জার্মানিতে যতটা বেশি ঘৃণ্য, ততটা আর পৃথিবীর কোথাও নয়।
আদনান সাদেক, ২০১৩
Adnan Sadeque
http://bsaagweb.de/germany-diary-adnan-sadeque
লেখক পরিচয়ঃ
http://bsaagweb.de/adnan-sadeque
Latest posts by Adnan Sadeque (see all)
- জার্মানির ডায়েরিঃ২৪ “ফিহা এবং কিছু সমীকরণ” - November 30, 2018
- জার্মানির পথেঃ১৬ জার্মানিতে মাইগ্রেশন, আসছে চমকপ্রদ নতুন আইন, ২০১৮ - November 21, 2018
- জার্মানিঃ “Das Beste, oder nichts” - January 23, 2018